- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর বিরুদ্ধে। দেশটির ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকরা অভিযোগ করেছেন, আরএসএফ পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে এবং এই কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তাদের সহায়তা দিচ্ছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) কায়রোতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিশরে নিযুক্ত সুদানি রাষ্ট্রদূত ইমাদেলদিন মুস্তাফা আদাউই বলেন, “আরএসএফ উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশারে যুদ্ধাপরাধ করেছে। তারা নারী, শিশু, বয়স্ক কাউকেই রেহাই দেয়নি। এ কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান— “আরএসএফকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের সমর্থনকারী ইউএইকে দায়ী করতে হবে।”
তবে ইউএই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, “আমরা সংঘাত বন্ধে কাজ করছি। বরং সবাই মিলে ভুল করেছি, যখন দুই সেনাপ্রধান মিলে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করেছিল।”
সুদানের প্রধানমন্ত্রী কামিল ইদ্রিসও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আরএসএফকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে।” তবে তিনি বিদেশি সেনা মোতায়েনের ধারণাকে “অবৈধ” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
১৮ মাস অবরুদ্ধ থাকার পর গত সপ্তাহে আরএসএফ এল-ফাশার দখল করে নেয়। শহরটির পতনের পর থেকেই গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের খবর প্রকাশ্যে আসছে। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এলাকা থেকে পালিয়ে আসা এক প্রত্যক্ষদর্শী আদম ইয়াহইয়া জানান, “রাস্তায় লাশে ভরে গিয়েছিল। আরএসএফ সদস্যরা নারী-পুরুষ-শিশু, কাউকেই ছাড়েনি। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে মরুভূমি পেরিয়ে পালিয়ে এসেছি।”
আরেক নারী, ৪৫ বছর বয়সী রাশা, জানান— “আরএসএফ সদস্যরা আমাকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করেছে। পরে তারা আমাকে ছেড়ে দিলেও আমার ছেলেদের খুঁজে পাইনি।”
মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ, এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না। সলিডারিতেস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্যারোলিন বোভার্ড বলেন, “এল-ফাশার থেকে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। হাজারো মানুষ গ্রামাঞ্চলে আটকা পড়ে আছে, যেখানে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি।”
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বর্তমানে পরিস্থিতিকে “বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট” বলে অভিহিত করছে এবং অবিলম্বে মানবিক করিডোর খোলার দাবি জানাচ্ছে।