- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
ইউক্রেনীয় যুদ্ধ ব্যবস্থায় এক অদ্ভুত এবং কার্যকর ভাঁজ বিকশিত হচ্ছে — যুদ্ধের ফলাফলকে পয়েন্টে পরিমাপ করে সেই পয়েন্ট নিয়ে হাতে-কলমে নতুন যন্ত্রপাতি কেনার সুযোগ। দেশটির প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী মিখাইলো ফেলদোরভGuardian পত্রিকাকে বলছেন, ‘‘Army of Drones Bonus System’’ নামের এই উদ্যোগটি সামরিক ইউনিটগুলোতে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং শুধু আক্রমণে নয়, এখন খোঁজ, বন্দি এনে দেওয়া, আর লজিস্টিকসেও প্রসারিত হচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরেই ড্রোন টিমগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়ে প্রায় ১৮,০০০ রুশ সৈন্যকে হত্যা বা আহত করার কারণে পয়েন্ট অর্জন করেছে। অংশগ্রহণকারী ড্রোন ইউনিটের সংখ্যা আগস্ট মাসে ছিল ৯৫, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ ইউনিটে। পয়েন্টগুলো কেবল অহেতুক পুরস্কার নয় — সেগুলো ‘Brave1’ নামে একটি অনলাইন বাজারে বিনিময় যোগ্য, যেখানে ১০০-এর বেশি ধরনের ড্রোন, স্বচল যান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম কেনা যায়।
এই ব্যবস্থা কেবল ড্রোন হামলায়ই সীমাবদ্ধ নেই। এখন স্কোরের ভিত্তিতে আর্টিলারি ইউনিটদের সফল আঘাতের জন্যও পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে; রিকনেসাঁস ইউনিটরা লক্ষ্য চিহ্নিত করা, এবং লজিস্টিক টিমগুলো স্বয়ংচালিত যান ব্যবহার করে সামগ্রী পৌঁছে দিলে পয়েন্ট পাচ্ছে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অংশ-মধ্যস্থ একটি সফটওয়্যারও ড্রোনকে লক্ষ্যমাত্রা বেছে নিতে ও আঘাতের শেষ মুহূর্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করছে — ফলে সঠিকতা বাড়ছে বলে দাবিটিও আছে।
ফেলদোরভ নিজে বলেন, সিস্টেমটি ‘‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’’ হওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে — বেশি হত্যা করলে বেশি পয়েন্ট, বেশি পয়েন্ট হলে বেশি ড্রোন, এবং আরও বেশি ভয়াবহতা। একই সময়ে তিনি জানান, এই পদ্ধতি মানবজীবনের মূল্যায়নকে অনুভবাতীতভাবে প্রযুক্তিগত করে তুলেছে — সিদ্ধান্তগুলো ঘনঘন রূঢ়, কারণ যুদ্ধের বাস্তবতা কঠোর।
Brave1-এ একটি লিডারবোর্ডও আছে; কিছু টিম ‘Achilles’ বা ‘Phoenix’—র মতো নাম নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে। কোনো কোনো সময় ড্রোন অপারেটররা সামনের সারির খুব কাছেই অবস্থান করে (প্রায় ২৫০ মিটার পর্যন্ত), কখনও আবার নিরাপদ দূর থেকে স্ক্রিনের সামনে বসে কন্ট্রোলার ব্যবহার করে অভিযান চালায়। অপারেটরদের মধ্যে কখনো কখনো প্রতিযোগিতা থাকে, কিন্তু বড় আক্রমণের সময় প্রত্যেকে মিলেমিশে কাজ করে বলে কমান্ডাররা বলছেন।
তবে অনেকে সতর্কও করছেন: ড্রোন-নির্ভর কৌশল সবখানে অ্যাপ্লাই করা উচিত নয়। রইসি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, এবং কিছু বিশ্লেষক বলছেন যে ন্যাটো-রকম শক্তিগুলোর জন্য এইরকম ‘গেমিফিকেশন’ অনুসরণ করা ঠিক নাও। বিশেষত নিয়মিত আর্টিলারি ও বিমানকৌশলে পুনরায় গুরুত্ব দেয়া উচিত — এমন পরামর্শও শোনা যায়।
পয়েন্ট-মর্যাদার কিছু বিবরণও বদলানো হয়েছে: গত কয়েক মাসে ঘনিষ্ট পরিবর্তন এনে পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে — উদাহরণস্বরূপ সাধারণ সেনাকরকে হতাহত করার পয়েন্ট দ্বিগুণ করে ১২ করে দেওয়া হয়েছে। ড্রোন অপারেটরকে খতম করলে ২৫ পয়েন্ট, আর একটি শত্রু সৈন্যকে জীবিত ধরে এনে দিলে ১২০ পয়েন্ট পর্যন্ত recompensa পাওয়া যায় — বন্দি-আপোষ বা বিনিময় কাজে ব্যবহারের জন্য বন্দি দরকার হওয়ায় এর গুরুত্ব উঁচু।
এই পদ্ধতি থেকে অর্জিত আরেকটি বড় সুবিধা — তথ্য। প্রতিটি সফল আঘাতের ভিডিও আপলোড করতে হয়, ফলে কোথায় আঘাত হচ্ছে, লাইন অব কন্ট্যাক্টের সঙ্কট কী, কোন ধরনের ড্রোন কার্যকর হচ্ছে—এসব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলত ইউনিটগুলো একে অপরের কাছ থেকে শিখছে, কার্যকর প্রযুক্তি দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং ক্ষুদ্রস্তরের উদ্ভাবন মাটির তলা থেকে উঠে আসছে।
যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক; কিন্তু ক্ষেত্রফল ও কৌশলের বাস্তবতায় থাকেই পরিকল্পনাকারীরা। কোন উদ্দেশ্যে কখনোই নীচু-পয়েন্ট লক্ষ্য ধ্বংস করা যাবে না—অবশ্যই সাম্প্রতিক কিছুকালীন সামরিক লক্ষ্য ও কৌশল অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টিম কমান্ডাররা বলেন, ‘‘প্রাথমিক লক্ষ্য কাজ শেষ করা; পয়েন্ট অনুশোচনা নয়।’’
সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেনের এই পয়েন্ট-ভিত্তিক প্রণালী যুদ্ধের আচরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে দ্রুত বদলে দিয়েছে — যেখানে খেলাধুলার মতো প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অনুপ্রেরণা এবং ডেটা-চালিত সিদ্ধান্ত একসাথে মিশে যায়। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশ ও শক্তি এই মডেল অনুকরণ করবে কি না, তা সময় বলবে; ততক্ষণ যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা আর প্রযুক্তির সংযুক্তি নিয়ে নবকিছু উদ্ভাবন চলতেই থাকবে।