- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN
পশ্চিম সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশে সশস্ত্র সংঘাতের কারণে এল-ফাশের শহর ও আশপাশের গ্রাম থেকে নিরাপত্তার খোঁজে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এলাকা থেকে কমপক্ষে ৮১ হাজার ৮১৭ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অধিকাংশই পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। গত ২৬ অক্টোবর আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস(আরএসএফ) শহরটি দখল করে নেয়, যা ১৮ মাস ধরে সুদানের সেনাবাহিনীর অবরোধে ছিল।
এল-ফাশের দখলের পর থেকে শহরের ভেতর ও আশপাশে গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। বহু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আরএসএফ সদস্যরা বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে, বন্দী করে নির্যাতন করছে এবং মুক্তিপণ দাবি করছে। একই সঙ্গে শহরে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে এবং কলেরাসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
শহরের হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ বা নিহত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন নিকটবর্তী তাউইলা শহরে, আবার কেউ কেউ এল-ফাশেরের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সুদানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সংকট চলছে। দেশে অন্তত ৯৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত—যারা ১৮টি অঙ্গরাজ্যের ১৮৫টি এলাকায় ছড়িয়ে আছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দক্ষিণ দারফুর (১৮ লাখ ৪০ হাজার), উত্তর দারফুর (১৭ লাখ ৫০ হাজার) এবং মধ্য দারফুর (৯ লাখ ৭৮ হাজার) থেকে। এদের অর্ধেকেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৫১ শতাংশ, শিশু।
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দারফুরে আরএসএফের কর্মকাণ্ড গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই সুদানে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় সংঘাতের কারণে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিলেন। ২০২৩ সালের এপ্রিলের পর থেকে আরও ৭২ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ২৭ লাখ খার্তুম থেকে, ২০ লাখ দক্ষিণ দারফুর থেকে এবং সমপরিমাণ উত্তর দারফুর থেকে।
এছাড়া, প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার সুদানি নাগরিক প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। সব মিলিয়ে সুদানজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ—যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি।