- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | PNN:
ডিএনএ–এর গঠন উদ্ভাবনের জন্য নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন আর নেই। বৃহস্পতিবার সংক্ষিপ্ত অসুস্থতার পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত ডিএনএ–এর ডাবল হেলিক্স গঠন আবিষ্কারের জন্য ওয়াটসন ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। সহকর্মী ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিন্সের সঙ্গে এই আবিষ্কার আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে।
১৯২৮ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জন্ম নেওয়া ওয়াটসন ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির রহস্য জানার আগ্রহে ছিলেন। মাত্র দুই বছর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার পরই তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। পরবর্তীতে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং সেখান থেকেই তাঁর জীববিজ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ গড়ে ওঠে।
১৯৫১ সালে ওয়াটসন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন এবং সেখানে পরিচয় হয় ক্রিক ও উইলকিন্সের সঙ্গে। তাঁদের যৌথ গবেষণাতেই উন্মোচিত হয় জীবনের মূল রহস্য—ডিএনএ–এর গঠন।
বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি ওয়াটসন ছিলেন সফল লেখকও। তাঁর লেখা পাঠ্যপুস্তক “মলিকুলার বায়োলজি অব দ্য জিন” এখনো বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এবং গবেষণার এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দেন।
১৯৯০-এর দশকে তিনি হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের প্রথম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন, যার মাধ্যমে মানব জিনের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরির যাত্রা শুরু হয়।
তবে জীবনের শেষভাগে ওয়াটসনের সুনাম বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। বর্ণবাদী ও লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্যের কারণে তাঁর বেশ কিছু সম্মানসূচক উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে তিনি নিজের নোবেল পদক বিক্রি করে সেই অর্থ গবেষণায় দান করেন; পরে এক রুশ ধনকুবের পদকটি ফেরত দেন তাঁকে।
জেমস ওয়াটসন বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক আলোচিত নাম—একদিকে যুগান্তকারী আবিষ্কার, অন্যদিকে বিতর্কিত মতামত। তবু মানব জিন ও জীবনের গঠন নিয়ে তাঁর গবেষণা আজও আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত হয়।