- ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। PNN
বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত ও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গত বছর প্রায় ১২ হাজার শিশু নিহত বা আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, এ সংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশই বিস্ফোরক অস্ত্রের কারণে নিহত বা আহত হয়েছে। ২০০৬ সালে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের তুলনায় শিশু হতাহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশ। সংস্থাটি একে “শৈশব ধ্বংসের সুস্পষ্ট প্রমাণ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
‘চিলড্রেন অ্যান্ড ব্লাস্ট ইনজুরিজ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক যুদ্ধ ক্রমেই শহরাঞ্চলকে কেন্দ্র করে হওয়ায় শিশুদের ওপর বিস্ফোরক অস্ত্রের প্রভাব ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ি, বিদ্যালয়, খেলার মাঠ—যেসব স্থানে শিশু নিরাপদ থাকার কথা—সেগুলোই এখন পরিণত হচ্ছে মৃত্যু ফাঁদে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মানবিক অ্যাডভোকেসি উপদেষ্টা নারমিনা স্ট্রিশেনেটস বলেন, “আজকের যুদ্ধগুলোতে শিশুদের জীবনই সবচেয়ে বড় মূল্য হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে … একসময়ের নিন্দিত কর্মকাণ্ড এখন ‘যুদ্ধের খরচ’ বলে উপেক্ষা করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।”
২০২৪ সালে যেসব সংঘাতে শিশু সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় গত এক বছরে গাজায় ২০ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। ইউনিসেফের হিসেবে, আহত-নিহত শিশু মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬৪ হাজারেরও বেশি।
গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বহু শিশুর জীবনরক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, বর্তমানে গাজায় “আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গচ্ছেদের ঘটনা” দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কথা থাকলেও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় গত কয়েক সপ্তাহেই আরও অন্তত ৪৬ শিশু নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গাজায় প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ শিশু বিস্ফোরকের কারণে আজীবনব্যাপী শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে—যেমন অঙ্গচ্ছেদ, শ্রবণশক্তি হারানো, গুরুতর পোড়া বা জটিল ফ্র্যাকচার।
সুদানে যুদ্ধকবলিত অঞ্চল থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১ কোটি শিশু বসবাস করছে। সেখানে ২০২৩ সালে ১,২০০ শিশুর মৃত্যু–আহত হলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৩৯—এক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি।
ইউক্রেনেও বিস্ফোরক অস্ত্রে আহত বা বিকলাঙ্গ শিশুদের সংখ্যা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে—২০২৩ সালের ৩৩৯ জন থেকে ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৭৭ জন।
শিশুদের দেহ ক্ষুদ্র, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শারীরবৃত্তীয় গঠন এখনও বিকাশমান হওয়ায় বিস্ফোরণের আঘাত তাদের জন্য অনেক বেশি মারাত্মক। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুর অঙ্গচ্ছেদের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিশেষজ্ঞরা জানায়, শিশুদের বাঁচিয়ে রাখা যতটা কঠিন, তাদের ভবিষ্যৎ স্বাভাবিক জীবনের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া তার চেয়েও কঠিন।
সেভ দ্য চিলড্রেন সতর্ক করে বলেছে, বিস্ফোরণের প্রভাব শুধু যুদ্ধ চলাকালীন সীমাবদ্ধ থাকে না। যুদ্ধের পর অনাবিস্ফোরিত গোলা ও বিস্ফোরক অবশিষ্টাংশ বছরের পর বছর শিশুদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে থাকে। পাশাপাশি মানসিক আঘাত ও সামাজিক বিপর্যয়ও দীর্ঘমেয়াদে তাদের স্বাভাবিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
তথ্যসুত্রঃ আল জাজিরা