Friday, December 5, 2025

মার্কিন গবেষণায় ইমিউন সিস্টেমের উন্নতির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্ভাব্য নতুন দিক


ছবিঃ একটি ছোট মেয়ে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করছে, চীনে ৬-১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য একটি mass ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের সময়, ৭ জানুয়ারি, ২০২২ (সংগৃহীত । আল জাজিরা । Willy Kurniawan/Reuters)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |PNN 

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন দ্রুত উৎপাদিত mRNA মডেল ভিত্তিক ভ্যাকসিনগুলি এখন ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখাচ্ছে। নতুন গবেষণাগুলির ফলাফল অনুযায়ী, এই ভ্যাকসিনগুলি কেবল কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করে না, বরং শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ক্যান্সার টিউমার শনাক্ত এবং আক্রমণ করতে সাহায্য করতে পারে।

মাউসের উপর পরিচালিত গবেষণা এবং ক্যান্সার রোগীদের মেডিকেল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এক বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে। যারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছিলেন এবং পরে ক্যান্সারের ইমিউনোথেরাপি শুরু করেছিলেন, তারা দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন, তাদের তুলনায় যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের মৃত্যুহার বেশি ছিল।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেক্সাসের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকরা এই ফলাফলগুলি এই সপ্তাহে বার্লিনে ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর মেডিক্যাল অনকোলজি কংগ্রেসে উপস্থাপন করেছেন। এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে স্বীকৃত জার্নাল 'ন্যাচার'এ।

mRNA ভ্যাকসিন ঐতিহ্যবাহী ভ্যাকসিনের থেকে আলাদা, কারণ এটি শরীরে ভাইরাসের ক্ষতিপূরণ অংশের পরিবর্তে "মেসেঞ্জার RNA" নামে একটি ছোট জেনেটিক কোড সরাসরি প্রবাহিত করে। এই RNA কোডটি শরীরের কোষে পৌঁছে নির্দেশনা দেয়, যাতে একটি প্রোটিন তৈরি হয়, যা ভাইরাসের মতো দেখতে হয়। এরপর শরীর সেই প্রোটিনকে শনাক্ত করে এবং এটি থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা কোভিড-১৯ mRNA ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তারা ইমিউনোথেরাপির পর দীর্ঘসময় বেঁচে ছিলেন, বিশেষ করে যারা "কোল্ড" (অ্যামিউন সিস্টেমের জন্য কঠিন) টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, mRNA ভ্যাকসিন তাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সচেতন করেছে, যা তাদের কঠিন ক্যান্সারগুলিকে আরও সহজে শনাক্ত এবং আক্রমণ করতে সহায়তা করেছে।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, মেলানোমা (ত্বকের ক্যান্সার) আক্রান্ত ৪৩ জন রোগী যারা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তাদের বেঁচে থাকার সময় ৩ বছরেরও বেশি ছিল। অন্যদিকে, যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের বেঁচে থাকার গড় সময় ছিল মাত্র ২ বছর।

যদিও এই গবেষণাগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে যদি এটি ভবিষ্যতে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে নিশ্চিত হয়, তবে এটি ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে। গবেষকরা দাবি করেছেন, এই ভ্যাকসিনগুলি টিউমারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটি নতুন দিক খুলে দিতে পারে।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট এলিয়াস সায়ুর বলেন, “এই ভ্যাকসিনটি ইমিউন রেসপন্সকে পুনঃপ্রোগ্রাম করে এবং এটি এমন একটি সাধারণ ক্যান্সার ভ্যাকসিন হতে পারে যা সকল ক্যান্সার রোগীর জন্য উপযোগী।”

এই গবেষণার ফলাফল যদি সঠিক হয় এবং পরবর্তীতে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়, তবে এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে। গবেষকরা এখন Phase 3 ট্রায়াল শুরু করার পরিকল্পনা করছেন, যা নিশ্চিত করবে যে কোভিড-১৯ mRNA ভ্যাকসিন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মান্য চিকিৎসার অংশ হতে পারে কি না।

এছাড়া, মাউসের উপর পরিচালিত এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে যে, mRNA ভ্যাকসিন সরাসরি টিউমারে প্রয়োগ করলে ডেনড্রিটিক সেলগুলি (একটি ধরনের সাদা রক্তকণিকা) আরো সজাগ হয়ে উঠে এবং টিউমারের উপস্থিতি শনাক্ত করে, যা শেষ পর্যন্ত ক্যান্সার সেলগুলোকে আক্রমণ করতে সাহায্য করে।

এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, তবে আরও গবেষণা ও পরীক্ষার প্রয়োজন।

Super Admin

PNN

প্লিজ লগইন পোস্টে মন্তব্য করুন!

আপনিও পছন্দ করতে পারেন