- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
চলমান যুদ্ধ, ধ্বংস আর মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও থেমে থাকেনি গাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে গাজার মাধ্যমিক স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা, যা আয়োজন করেছে অবরুদ্ধ গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের দ্বার খুলে দিতে চায় শিক্ষার্থীরা, এমনটাই জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এই পরীক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরুর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষা। ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেই এই আয়োজনকে শিক্ষাক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার প্রায় ১,৫০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে। পরীক্ষা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে। নিরাপত্তা ও যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ইতোমধ্যেই সব ধরনের কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বাসায় বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে, আবার কেউ অংশ নিচ্ছে নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে—যার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা বিবেচনায়।
তারেক আবু আজজুম বলেন, যিনি গাজার দিয়ার আল-বালাহ এলাকা থেকে প্রতিবেদন করছেন, বলেন, “এই পরীক্ষাই গাজার শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষা, বৃত্তি এবং একটি ভালো ভবিষ্যতের শেষ আশার প্রতীক।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধের মধ্যে—যেখানে নেই শ্রেণিকক্ষ, নেই পাঠ্যপুস্তক, নেই নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ—সেখানেও শিক্ষার্থীরা লড়াই করছে। তারা অনলাইনে লগইন করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে, আর বলছে—এই যুদ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে পারবে না।”
গাজার শিক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলি অবরোধ ও বিমান হামলায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বহু স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শুধুই শিক্ষাগত মূল্য নয়, এটি তাদের প্রতিরোধ এবং আশাবাদের প্রকাশ হিসেবেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সাহসী উদ্যোগ শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের পথ খুলে দিচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে গাজার শিক্ষাক্ষেত্রে চলমান সংকট এবং সেই সংকটেও অবিচল প্রতিরোধের বার্তা।